★শাহীনুর ইসলাম ধ্রুব নয়ন:
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা ও ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ‘আপন-পর জানি না; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে’-মর্মে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, বিষয়টিকে তার দুর্নীতিবিরোধী কঠোর সদিচ্ছার পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনা করতে চায় টিআইবি।
সোমবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত’ বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজের অবস্থান বা ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। এ প্রসঙ্গে সরকারের উদ্যোগ বিষয়ে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দেশবাসীকে অবহিত করেছেন।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনার যোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার নামে এবং বাস্তবে সরকারি অন্যান্য উচ্চ পদে অর্পিত ক্ষমতার বা তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জনের যে সংস্কৃতি স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে, এজন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ ও অস্বস্তির প্রকাশ ঘটেছে। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘এসব জঞ্জাল (দুর্নীতিবাজদের) সাফ করতে হবে; হাত যখন দিয়েছি, ছাড়বো না। দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটি বিশ্বাস করি না; আপন-পর জানি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত’ বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পদ আহরণকারীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়া প্রধানমন্ত্রীর বাসার সাবেক কর্মী, যিনি প্রধানমন্ত্রী দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না। তার অর্থ-সম্পদ দুদকের অনুসন্ধান সাপেক্ষে যদি বৈধ সূত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণিত হয়, তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে এটি সরকারপ্রধানের জন্য অবমাননাকর হবে। কারণ, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিতের আইনি বাধ্যবাধকতা ও রাজনৈতিক প্রত্যয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
‘একই ভাবে যে আলোচিত ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে এ অবস্থান ঘোষিত হয়েছে, তার কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো, বিশেষ করে সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক পুলিশ ও র্যাবপ্রধান, সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্যসহ সব উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে’- বিবৃতিতে যোগ করেন তিনি।
‘দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে’- এমন অজুহাতকে প্রধানমন্ত্রী পুরোপুরি অযৌক্তিক প্রমাণ করেছেন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যে প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্য ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার অর্থবহ ও কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রণয়ন করুন এবং তার কঠোর প্রয়োগ করে দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতা ও বিচারহীনতার জন্য জনমনে উদ্ভূত উদ্বেগ ও শঙ্কা নিরসনের পথ সুগম করুন।
Leave a Reply