News Headline :
ঠাকুরগাঁওয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরষ্কার বিতরণ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাসনাত-সারজিসের রিট ডেঙ্গুতে ২৪ ঘন্টায় ৬ জনের মৃত্যু জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ রাজধানীতে পথচারীদের ওপর উঠে গেলো প্রাইভেটকার; গুরুতর আহত ৩ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকার তৎপর শহিদি মার্চে লাখো ছাত্র-জনতার ঢল ট্রাক’ প্রতীকে নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়: প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত: টিআইবি
প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর চীনের গণমাধ্যমে যেভাবে উঠে এসেছে

প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর চীনের গণমাধ্যমে যেভাবে উঠে এসেছে

★নয়ন লাইভ অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফর বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে গভীর করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। দেশটির প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদমাধ্যম শেখ হাসিনার তিন দিনের বেইজিং সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সফরের শেষ দিন গতকাল বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তাঁদের বৈঠক শেষে চীনের আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে একটি ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছে। চীনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বৈঠকে সি বলেছেন, ১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে দুই দেশ সব সময় পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখেছে ও পরস্পরকে সমর্থন দিয়েছে। একে অপরের সঙ্গে সমতাপূর্ণ আচরণ করেছে ও সমলাভের ভিত্তিতে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) দেশগুলোর মধ্যে চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও পারস্পরিক উপকারী অংশীদারত্বের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সিজিটিএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর ‘জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের বর্ষকে (ইয়ার অব পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জস)’ সামনে রেখে দুই দেশকে সংস্কৃতি, পর্যটন, সংবাদমাধ্যম ও খেলাধুলার মতো খাতে বিনিময় এবং সহযোগিতা বাড়াতে চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন সি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে চীন প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সংবাদপত্র পিপলস ডেইলির ওয়েবসাইটে বুধবার রাতে হাসিনা-সির বৈঠকের প্রতিবেদনকে প্রধান খবর করা হয়েছে। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া থেকে নেওয়া প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘সি বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন’।

বুধবার সিসিপির আরেক মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস শেখ হাসিনা ও সির বৈঠক নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নত ও বিস্তৃত হয়েছে’ শিরোনামের মন্তব্যধর্মী প্রতিবেদনে সিজিটিএনের মতো সির বক্তব্যের প্রায় একই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ এক–চীন নীতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলে, তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে এবং চীনের নিজের মূল স্বার্থ রক্ষার কাজকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’

প্রতিবেদনটিতে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা ‍বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেংয়ের মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। তিনি হাসিনার সফরকে বেইজিং ও ঢাকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি যোগসূত্র বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

শেখ হাসিনার বেইজিং সফর নিয়ে গ্লোবাল টাইমসের সঙ্গে সাংহাই একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের গবেষণা ফেলো হু ঝিয়াংও কথা বলেছেন। এই সফর দুই দেশের মধ্যে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে আরও উন্নীত করবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

হু বলেন, দুই দেশের বিগত বছরগুলোর সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে কিছু জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। চীনের বিভিন্ন ধারণা (আইডিয়া) ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে—এটা ঢাকা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।

গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বেইজিং সফরকে ভারত কীভাবে দেখছে, সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হাসিনার চীন সফরকে “প্রধান দুই খেলোয়াড়কে খুশি রাখার ভারসাম্যপূর্ণ কাজ” হিসেবে দেখে। তারা মনে করে, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে দরকার, আর অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য দরকার চীনকে। ভারতের কিছু গণমাধ্যম বেইজিং ও ঢাকার মধ্যকার সহযোগিতা নিয়ে তেমন কিছু আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়।’

আরেক বিশেষজ্ঞ কিয়ান মনে করেন, ভারতের চাপের মুখে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ঢাকাকে নিজের কূটনৈতিক স্বাধীনতা ও উন্নয়নের সুযোগ আরও ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুয়ার খুলে দিচ্ছে।

গ্লোবাল টাইমস গত মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ-সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন’ নিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনার বেইজিংয়ে আগমনের প্রথম দিন সোমবার সিসিপির এই মুখপত্রে চীনের কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ঝাং জিয়াওউ একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন।

হংকংভিত্তিক ব্যক্তিমালিকানাধীন গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট (এসসিএমপি) বুধবার শেখ হাসিনার বেইজিং সফর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘চীন ও বাংলাদেশ বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চীনের ঋণ নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বেইজিং সফরকালে এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সুদের হার কমাতে অনুরোধ করেছেন। শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের আগে চীনের কাছে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ঘোষণার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে হংকংভিত্তিক গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে।

এসসিএমপি জানায়, বাংলাদেশের এই ঋণের অনুরোধের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউয়ান (আরএমবি) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed by Pious.Cloud